সোমবার৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্দুক যুদ্ধের মিথ্যা নাটক শিখিয়ে দেন এসপি মাসুদ

বাংলা সংবাদ২৪ ডেস্ক--অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান  পুলিশের গুলিতে  নিহত হওয়ার পর গুলি ছোড়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেনকে ফোন করেন। এ সময় এসপি মাসুদ হোসেন গুলিবর্ষণকারী পরিদর্শক লিয়াকতকে মিথ্যা বক্তব্য শিখিয়ে দেন।

ওসি প্রদীপ কুমার এসপিকে জানান তার নির্দেশ পেয়েই লিয়াকত আলী সিনহাকে গুলি করেন। এ কথোপকথনের মধ্য দিয়ে সিনহা হত্যাকান্ড- ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপতৎপরতা চালিয়েছিলেন এসপি, সেটি নতুন করে সামনে এলো। গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন ঘটনার পরদিনও তিনি আত্মরক্ষার্থে  পুলিশের গুলি, সিনহাকে সন্দেহভাজন ডাকাত ও মাদক জব্দের ভুয়া গল্প ।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চলমান অবস্থায় এখনো এসপি মাসুদ হোসেন স্বপদে বহাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। ওই রাতে তাদের পুরো কথোপকথনটি তুলে ধরা হলো।

ওসি প্রদীপ : আদাব, স্যার
এসপি মাসুদ : কী আপনি এমন কী হইছে, বলেন
ওসি প্রদীপ : লিয়াকতরে গুলি করছে নাকি স্যার, আমি যাচ্ছি ওখানে
এসপি মাসুদ : হ্যাঁ
ওসি প্রদীপ : চেকপোস্টে একটা গাড়িকে সিগন্যাল দিছে, সিগন্যাল দেওয়ায় গাড়ি থেকে তাকে পিস্তল দিয়ে গুলি করছে। ওই সময় আমি তাকে বললাম, ঠিক আছে তুমিও তাড়াতাড়ি ওকে
গুলি করো। সেও নাকি তাকে গুলি করেছে স্যার, আমি যাচ্ছি স্যার ওখানে, স্যার।
এসপি মাসুদ : যান যান
তবে ওসি প্রদীপের বক্তব্যের সঙ্গে গুলিবর্ষণকারী পরিদর্শক লিয়াকত আলীর বক্তব্যের মিল নেই। এই তিন পুলিশ কর্মকর্তার কথোপকথনের কোথাও মাদকের উল্লেখ নেই। এখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে সিনহার কাছে মাদক এলো কীভাবে?
এসপি মাসুদ : হ্যালো
পরিদর্শক লিয়াকত : আসসালামু আলাইকুম স্যার। স্যার ওখানে একটা প্রাইভেটকার, ঢাকা মেট্রো লেখা। আর্মির পোশাক-টোশাক পরা। সে ওই বোরকা খুলে ফেলছে। পরে যখন তাকে চার্জ করছি, সে মেজর পরিচয় দিয়ে গাড়িতে চলে যেতে চাইছিল। পরে অস্ত্র তাক করছিল, আমি গুলি করছি স্যার। একজনকে ডাউন করছি, আরেকজন ধরে ফেলছি স্যার। স্যার, আমি কী করব স্যার? আমাকে পিস্তল তাক করছে, পিস্তল পাইছি তো স্যার।

এবার এসপি মাসুদ হোসেন পরিদর্শক লিয়াকতের বক্তব্য পরিবর্তন করে তাকে মিথ্যা বয়ান শিখিয়ে দেন।
এসপি মাসুদ : আচ্ছা ঠিক আছে। তোমারে গুলি করছে, তোমার গায়ে লাগে নাই। তুমি যে গুলি করছ সেডা তার গায়ে লাগছে।
সিনহা গুলি করেছে বলে লিয়াকতকে বলতে শিখিয়ে দেন এসপি মাসুদ।

এদিকে টেলিফোন কথোপকথনের বিষয়ে পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেনের বক্তব্য জানতে চেষ্টা করেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এদিকে, সিনহা হত্যা মামলায় আগামীকাল রবিবারে ওসি প্রদীপসহ ৭ পুলিশ সদস্যকে রিমান্ডে নেবে র্যাব। র্যাব জানিয়েছে, মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন তারা, যেন আসামিদের রিমান্ডে নেওয়ার পর সময় নষ্ট না হয়।

র‌্যাবের আইন গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ  বলেন এ বিষয়ে – আমাদের কিছু প্রস্তুতি রয়েছে। সেগুলো শেষ করে আশা করছি রবিবার থেকে রিমান্ড শুরু হবে।

গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের টেকনাফ থানার শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় সিনহার বড় বোন ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় গত বৃহস্পতিবার ওসি প্রদীপসহ ৭ পুলিশ সদস্যের ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন কক্সবাজার আদালত।