সোমবার৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাভারে কিশোর গ্যাং লিডার ছাত্রের পিটুনিতে শিক্ষকের মৃত্যু

স্টাফ রিপোটার–

সাভারের আশুলিয়ায় এক শিক্ষার্থীর মারধরে আহত শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার মারা গেছেন।আজ সোমবার সকালে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ”

;এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ইনচার্জ ইউসুফ আলী তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।এর আগে শনিবার দুপুরে ওই শিক্ষকের কর্মস্থল আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী কলেজে প্রকাশ্যে তাকে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে ও খুঁচিয়ে গুরুতর আহত করে ওই প্রতিষ্ঠানেরই দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জিতু।”

;এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।নিহত উৎপল কুমার সরকার (৩৫) সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার এলংজানি গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজ শাখার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক এবং অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। গত দশ বছর ধরে উৎপল কুমার সরকার ওই প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা করে আসছেন।”

;অন্যদিকে মারধরের অভিযোগ ওঠা শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জিতু (১৬) আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার বাসিন্দা। সে হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।”

;প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষকরা জানান- প্রতি বছরের মতো এবারও হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে নারী শিক্ষার্থীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন হয়। শনিবার দুপুরে খেলা চলাকালীন একই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে উৎপল সরকারকে বেধড়ক পেটাতে থাকে।”

;একপর্যায়ে সে ওই শিক্ষকের মাথায় আঘাত করে এবং স্ট্যাম্পের সুচালো অংশ দিয়ে পেটের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। পরে শিক্ষকরা এগিয়ে গেলে ওই ছাত্র সেখান থেকে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় উৎপল সরকারকে প্রথমে আশুলিয়া নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়া হয়।তারা আরো জানা-, আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে তিনি মারা যান।”

;হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন, সেদিন দুপুরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলাকালে একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন শিক্ষক উৎপল সরকার। এ সময় দশম শ্রেণির ছাত্র জিতু ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে তাকে মারধর করে। উৎপল সরকার শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হওয়ায় তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা নিয়ে কাউন্সেলিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতেন। কেন ওই ছাত্র এমন ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি এখনো কেউ সুস্পষ্টভাবে বলতে পারছেন না।”

;অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান আরো বলেন- এভাবে দিনে-দুপুরে একজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষককে পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে হত্যা করায় আমিসহ ৫৫ শিক্ষক ও কর্মচারী বর্তমানে আতঙ্কে রয়েছি। এর আগে বিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে আসা পুলিশকে আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ের কথা জানিয়েছিলাম কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।”

;লোকমুখে শুনতে পাচ্ছি হত্যাকারী জিতু উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসবে এবং এলাকায় তার বখাটেপনা চালিয়ে যাবে।তিনি আরও বলেন- শিক্ষক হত্যাকরী জিতুর একটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। সে তাদের নিয়ে গভীর রাতেও বিদ্যালয়ের গেটে অবস্থান করে। আমরা এই হত্যাকারীর উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছি। পাশাপাশি এই হত্যাকাণ্ড তদন্তের জন্য বিদ্যালয় থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হবে।”

;নিহতের ভাই অসীম কুমার সরকার বলেন- ‘ঘটনার দিন বাসা থেকে স্কুলের পাশেই আমার দোকানে আসার সময় জানতে পারি আমার ছোট ভাইকে শিক্ষার্থী জিতু স্ট্যাম্প দিয়ে পিটাইছে। হাসপাতালে গিয়ে শুনি পেটে, বুকে, পিঠে ও মাথায় স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার আমার ভাই মারা গেছে।”

;মামলা তদন্ত কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. এমদাদুল হক বলেন- শিক্ষক উৎপল সরকার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা রক্ষায় শাসন করতেন। হয়তো পূর্বের এমন কোনো বিষয়ে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ;