সিরিয়াল কিলার হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম (বাউল সেলিম) অষ্টম শ্রেণি পাস করে কাজ করতেন মুদির দোকানে। ২০০১ সালে চাঞ্চল্যকর বিদ্যুৎ হত্যাকাণ্ডে ৪ জন আসামির মধ্যে তিনি অন্যতম। এ হত্যাকাণ্ডে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। এছাড়া তিনি ১৯৯৭ সালে বিষু হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ২১ বছর বয়সে অপরাধ জগতে পা রাখেন। এরপর থেকে এলাকায় বিভিন্ন মারামারিতে অংশ নিয়ে দুর্র্ধষ হেলাল নামে পরিচিত লাভ করেন।”
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, বুধবার (১২ জানুয়ারি) রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন থেকে সেলিমকে গ্রেফতার করে”
;জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম জানায়, ২০০১ সালের বগুড়ার চাঞ্চল্যকর বিদ্যুৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সে আরো ২টি হত্যা মামলার আসামি। ১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলার আসামি বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। তিনি আরো জানান, ১৯৯৭ সালে বগুড়াতে চাঞ্চল্যকর বিষ্ণু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। সেলিম ২১ বছর বয়সে ওই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি “
;আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে জানা গেছে। এভাবেই সে বিভিন্ন অপারাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং এলাকায় হেলাল নামে পরিচিতি পায়। খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০০০ সালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকায় দুইপক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার বাম হাতে মারাত্মক জখম হয়। বাম হাত পঙ্গু হয়।”
;এ ঘটনার পর থেকে সে বিভিন্ন নামে (দুর্র্ধষ হেলাল, হাত লুলা হেলাল) এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। ২০০১ সালে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিদ্যুতের পরিবার বাদি হয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়।”
;২০০৬ সালে বগুড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রবিউল নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেলিম ওই হত্যাকাণ্ডের একজন চার্জশিটভুক্ত আসামি। ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় দায়েরকৃত একটি চুরির মামলায় ২০১৫ সালে গ্রেফতার হয় সেলিম। একই সঙ্গে ২০০১ সালের বিদ্যুৎ হত্যা মামলার বিচারকাজ চলমান থাকে।”
২০১৫ সালেই ওই চুরির মামলায় সে জামিনে মুক্ত হয় এবং একই দিনে বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সেলিম ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। পরে এলাকায় মুদি দোকানদারি শুরু করে।”
পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তার বিরুদ্ধে ২০১০ সালে দায়েরকৃত চুরির মামলায় ২০১৫ সালে জামিন প্রাপ্তির দিনে বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হলে কৌশলে এলাকা ত্যাগ করে। পরে ফেরারি জীবনযাপন শুরু করে। প্রথমে সে বগুড়া থেকে ট্রেনযোগে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আসে। পরবর্তীতে কমলাপুর থেকে ট্রেনযোগে সে চট্টগ্রামে চলে যায় এবং সেখানকার আমানত শাহ মাজারে ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশকিছুদিন অবস্থান করে।”
;সেখান থেকে ট্রেনযোগে সিলেটের শাহজালাল মাজারে চলে যায়। সিলেটে গিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে আরো কিছুদিন অবস্থান করে। বিভিন্ন সময়ে সে বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করত। সে কিশোরগঞ্জ ভৈরব রেলস্টেশনে নাম-ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে সেলিম ফকির নাম ধারণ করে।র্যাব জানায়- আনুমানিক ৫ বছর আগে হেলাল নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে কিশোর পলাশ ওরফে গামছা পলাশ এর একটি গানের শুটিং চলাকালে রেললাইনের পাশে বাউল গান গাচ্ছিল। ”
তখন শুটিংয়ের একজন ব্যক্তি তাকে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলে বহুল জনপ্রিয় ‘ভাঙা তরী ছেঁড়া পাল’ শিরোনামের গানের বাউল মডেল হিসেবে তাকে দেখা যায়। প্রায় ৭ বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারি জীবনযাপন করছে। গত প্রায় ৪ বছর ধরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে একজন নারীর সঙ্গে সংসার করে আসছে।”
বিভিন্ন রেলস্টেশনে সে বাউল গান গেয়ে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। খন্দকার আল মঈন বলেন, আনুমানিক ৬ মাস আগে জনৈক ব্যক্তি ইউটিউবে প্রচারিত একটি গানের বাউল মডেল সম্পর্কে র্যাবর কাছে তথ্য দেয়, ওই মডেল সম্ভবত বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলার আসামি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বর্ণিত বিষয়ে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে র্যাব নিশ্চিত হয়। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।