বুধবার১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি২৭শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩০ লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় শেখ রাসেল স্কুলের নির্মাণকাজ বন্ধ করল ছাত্রলীগ!

বাংলা সংবাদ২৪ ডেস্ক– রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ রাসেল স্কুল ভবনের নির্মাণকাজে ছাত্রলীগের ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার দুপুরে ছাত্রলীগের দুই নেতা গিয়ে স্কুলটির কাজ বন্ধ করে দেন। এ সময় আশরাফুল ইসলাম নামের এক ম্যানেজারকে তুলে নিয়ে যায় তারা। পরে চাঁদার বিষয়টি দ্রুত মীমাংসা করার কথা বলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে ছাত্রলীগ এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছে।

নগরের কাজলা এলাকার বাসিন্দা মমতাজউদ্দীন  নির্মাণকাজের তত্ত্বাবধান (সুপারভাইজার) করছেন। গতকাল তিনি অভিযোগ করেন, গত ৫ জুলাই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন চারতলা ভবনের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ৩০ জুলাই তিনি নির্মাণকাজ শুরু করেন। ৩১ জুলাই প্রথমবারের মতো ছাত্রলীগের লোক সাইটে এসে ঝামেলা করে। এরপরেও তারা কয়েকবার আসে।

এসব কারণে তিনি ১০ই আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি তাদের কাছে জানতে চান, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কেন কাজে এসে ঝামেলা করছে। এতে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক তাকে বলেন, শোনেন ভাই আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা করছেন আমাদের সাথে মিটমাট না করলে হবে না। এ সময় তারা মমতাজউদ্দীনের কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এতে তিনি বলেন, টেন্ডারে শিকদার কনস্ট্রাকশন নির্মাণকাজের মূল দায়িত্ব পেয়েছে। আমি এখানে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছি। আপনি তাদের সাথে কথা বলেন। তবে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক এতে রাজি হননি।

মমতাজউদ্দিন  বলেন, তিনি এই ব্যাপারে প্রো-ভিসি চৌধুরী মো. জাকারিয়া, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ এবং প্রকল্প পরিচালক (পিডি) খন্দকার শাহরিয়ার রহমানের কাছে অভিযোগ করেন। প্রো-ভিসি তাকে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। তিনি ভিসি এম আব্দুস সোবহানকেও বিষয়টি জানাতে বলেন। ১০ আগস্ট ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি উপাচার্যকে বিষয়টি জানালে ভিসি ছাত্রলীগের ওপর ক্ষুব্ধ হন। তিনি মমতাজউদ্দিনকে বাঁধা না পেলে কাজ চালিয়ে যেতে বলেন।

তিনি অভিযোগ করেন, এরপরও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন সময়ে কাজে এসে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করতে থাকেন। সর্বশেষ গতকাল দুপুর দুইটার দিকে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ ওরফে বৃত্তসহ দুইজন সাইটে এসে আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যবস্থাপকের (ম্যানেজার) খোঁজ করেন। আশরাফুলকে না পেয়ে তারা আবু বকর নামে এক ব্যবস্থাপকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। দুপুর আড়াইটার দিকে তারা ফের এসে আশরাফুলকে মোটরসাইকেলে করে ডিনস কমপ্লেক্সের পেছনে নিয়ে যান। সেখানে তারা আশরাফুলকে মমতাজউদ্দিন ও ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে টাকার বিষয়টি “মীমাংসা” করতে বলেন। এর আগ পর্যন্ত তারা কাজ বন্ধ রাখতে হুমকি দেন।

এই ঘটনার পর মমতাজউদ্দিন স্কুল ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেন। মমতাজউদ্দিন বলেন, শ্রমিকেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকবে।
ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ। আমি আজ ক্যাম্পাসেই ছিলাম কিন্তু সেখানে (সাইটে) যাইনি। আমাকে কেউ ফাঁসানোর চেষ্টা করতে পারে। আমি নিজেও খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রয়োজনে মামলা করব।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘তিনি (মমতাজউদ্দিন) সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আরও কাজ হচ্ছে, সেগুলোতে তো কখনও যাইনি। আমরা বিষয়টি উপাচার্যকেও জানিয়েছি।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘আমাদের কী করার আছে বলেন! যা করার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করবে। আমার কাছে আজকেও অভিযোগ করেছে। আমি উপাচার্যকে জানিয়েছি।

উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।
জানা গেছে, বর্তমানে শেখ রাসেল স্কুলটি গত ৫ জুলাই জুবেরী মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে প্রায় ১.৩ একর জায়গায় শেখ রাসেল স্কুলের চারতলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শিকদার কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড বিল্ডার্স ১০ কোটি ৫৯ লাখ টাকায় নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায়।