বুধবার১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ২০শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত “গাছিরা”

খেজুর গাছ হতে রস সংগ্রহে ব্যস্ত সংগ্রহকারী। ছবিটি গতকাল কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর গ্রাম হতে তোলা।

আব্দুল্লাহ আল মানছুর(কুমিল্লা):- কুমিল্লায় খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা (রস সংগ্রাহক)। গাছিদের রস সংগ্রহের মধ্য দিয়ে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার প্রতিটি গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে গুড়-পাটালীসহ অন্যান্য হরেক রকমের রসের পিঠা তৈরির কার্যক্রম। এক সময় কুমিল্লা’র দক্ষিণাঞ্চলের গ্রাম্য বাজার, বড় মাঠ কিংবা সড়কের দু’পাশে সারি সারি খেজুরগাছ চোখে পড়তো।

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই গাছ। তারপরও যে খেজুর গাছ অবশিষ্ট আছে তাতে শীত মৌসুমের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুর গাছের রস (যা খেজুরের রস নামে পরিচিত) সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। সবৈচিত্রপূর্ণ ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এক একটি ঋতুর রয়েছে এক একটি বৈশিষ্ট্য।

তেমনই এক ঋতু হেমন্ত। এই ঋতুতেই দেখা মেলে শীতের। এই শীতের সময়ই পাওয়া যায় সু-স্বাদু পানীয় খেজুর গাছের রস। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে এই সু-স্বাদু রস পানের মজাই আলাদা। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে রস সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছেন গাছিরা। ফলে সারা বছর অযত্ন, অবহেলায় পড়ে থাকলেও পুরো কুমিল্লা জেলার গ্রামগঞ্জে খেজুরগাছের এখন কদর বেড়েছে।

এখনও শীত তেমন জেঁকে না বসলেও এরই মধ্যে খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন অনেকে গাছিরা। তবে, গাছ সংকটের কারণে প্রতি বছরের মতো এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করেছে গাছিরা। কয়েক বছর আগেও জেলার প্রতিটি বাড়ী, জমির আইল ও রাস্তার দুই পাশে দেখা যেত অসংখ্য খেজুর গাছ।

তবে এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। বছরের প্রায় চার মাস খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। যা দিয়ে তৈরি হয় সু-স্বাদু গুড় ও অন্যান্য পিঠা । অতীতে শীতকালে শহর থেকে মানুষ ছুটে আসতো গ্রাম বাংলার খেজুর রস খেতে। গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়ে। রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালী তৈরি করতেন তারা। যার স্বাদ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। যা এখন অনেকটাই রূপকথার মতো। খেজুরগাছের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যত বেশি শীত পড়বে ততো রস দেবে।

একটা গাছ ১৫ বছরেরও বেশি সময় রস দিতে পারে। শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। এছাড়া খেজুরগাছের পাতা দিয়ে আর্কষণীয় ও মজবুত পাটি তৈরি হয়। এমনকি জ্বালানি কাজেও ব্যাপক ব্যবহার হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন,কালের বির্বতন, ইটভাটায় পোড়ানোসহ বন বিভাগের নজরদারি না থাকায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পরিবেশ বান্ধব খেজুরগাছ এখন বিলুপ্তির পথে।

কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার মধ্যম বিজয়পুর গ্রামের খেজুরের রস সংগ্রহকারী (গাছি) আপেল মিয়া বলেন, শীত মৌসুমের শুরুতেই খেজুরগাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়। বছরের প্রায় চার মাস এই কাজ করেন তিনি। কাঁচা রস বিক্রির পাশাপাশি পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন।

বরুড়া উপজেলার মুগজী গ্রামের আব্দুল খালেক বলেন, বর্তমানে যে হারে খেজুরগাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, তাতে এক সময় হয়তো এ এলাকা থেক খেজুরগাছ একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে সবার উচিত তালগাছের মতো বেশি করে খেজুরগাছ লাগানো এবং তা যত্ন সহকারে বড় করা। আগামী প্রজন্মের জন্য হাজার বছরের এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে এ কাজে আমাদের সবার এগিয়ে আসতে হবে।

সংশ্লিষ্ট জেলা কৃষি গবেষকরা বলেন, আমরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে কুমিল্লার বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে খেজুরগাছ লাগানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। খেজুরগাছ ফসলের কোনো ক্ষতি করে না। এই গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচও করতে হয় না। এ বছর সঠিক সময়ে শীতের আগমন হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আগাম খেজুরগাছ ঝোরা (পরিষ্কার) শুরু হয়েছে।

কয়েক দিনের মধ্যেই গছিরা রস আহরণ শুরু করতে পারবেন। বর্তমানে প্রায় এক লাখের ও বেশি রস আহরণকারী খেজুরগাছ আছে কুমিল্লা জেলাতে। যেগুলো দিয়ে কৃষকরা খেজুরেররস সংগ্রহ এবং তা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুড় ও মিষ্টান্ন তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।