বাংলা সংবাদ২৪ ডেস্ক– উড়ন্ত উড়োজাহাজে দুজন নারী কেবিন ক্রুকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিনিয়র পাইলট ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদের বিরুদ্ধে।সস্প্রতি আবুধাবিগামী একটি উড়োজাহাজের ককপিটে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে বলে তাঁরা বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মোকাব্বির হোসেনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিমান সূত্র জানায়, অভিযোগকারী দুই কেবিন ক্রু তদন্ত কমিটির কাছে গত রবিবার লিখিত বক্তব্য জমা দেন। এরপর তাঁদের দেখাদেখি বেশ কয়েকজন কেবিন ক্রু তদন্ত টিমের কাছে বক্তব্য দিয়েছেন, যাঁরা অতীতে ক্যাপ্টেন ইশরাতের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া অভিযোগকারী দুই কেবিন ক্রুর একজনের স্বামীও বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী দুই কেবিন ক্রু বলেছেন, উড়ন্ত উড়োজাহাজে ককপিটে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দেন ইশরাত। এমনকি মাতাল অবস্থায় উত্ত্যক্ত করেন তিনি। শারীরিকভাবেও যৌন হয়রানির চেষ্টা চালান। শুধু হোটেলে তাঁর রুমে থাকার প্রস্তাবই নয়, বিভিন্ন সময় সুযোগ বুঝে অশ্লীল আচরণও করতেন ইশরাত।
জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিইও মোকাব্বির হোসেন গতকাল মঙ্গলবার বলেন, আমরা অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। এটি এখন তদন্তাধীন বিষয়। তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত কাউকে অভিযুক্ত করা ঠিক হবে না।তিনি বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাই এখনো দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের পাওয়া সাপেক্ষে তদন্ত কমিটি দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেবে।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী দুই কেবিন ক্রু বলেছেন, আবুধাবি যাওয়ার সময় ফ্লাইটের চিফ পার্চার খুকু তাঁদের একজনকে উড়োজাহাজের পেছনের দিকে পজিশন (দায়িত্ব) দেন। কিন্তু ক্যাপ্টেন ইশরাতের নির্দেশে তাঁকে আবার সামনে আনা হয়। নিয়ম অনুযায়ী সামনের অংশে দায়িত্বে থাকা কেবিন ক্রু ককপিটে সেবা দেন।
ওই ক্রু ককপিটে সেবা দিতে গেলে দেখেন, ক্যাপ্টেন ইশরাত মদ্যাপ অবস্থায়। তিনি বেল্ট খুলে ওই ক্রুর গায়ে হাত দেন। এরপর ওই ক্রু এসে চিফ পার্চারকে ঘটনাটি খুলে বলেন। তখন চিফ পার্চার তাঁর পরিবর্তে অন্য কেবিন ক্রুকে সামনের অংশে দায়িত্ব দেন। এই ক্রুও ইশরাতের যৌন হয়রানির শিকার হন। তাঁদের দুজনকেই আবুধাবি পৌঁছানোর পর তাঁর হোটেল কক্ষে রাতে থাকার প্রস্তাবও দেন ইশরাত।
জানা গেছে, আবুধাবী পৌঁছানোর পর পরই ভুক্তভোগী দুই কেবিন ক্র ই-মেইলে বিষয়টি বিমানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।ফিরতি ফ্লাইটের সময় গত ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে বিরতিকালে হোটেলে ওই ক্রুদের পাশাপাশি ক্যাপ্টেন ইশরাত কক্ষ বুকিং নেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। এ সময় চট্টগ্রামে ওই দুজন কেবিন ক্রু হোটেলে নিজেদের রক্ষা করতে তাঁদের স্বামীদের খবর দেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে দ্য পেনিনসুলা হোটেলে পাইলট-কেবিন ক্রুসহ মোট ১০ জনের কক্ষ বুকিং দেওয়া ছিল। ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ তাঁর নির্ধারিত ১৪ তলার কক্ষ পরিবর্তন করে ৯ তলায় অবস্থানরত অভিযোগকারী কেবিন ক্রুদের পাশের ৯০১ নম্বর কক্ষে চলে আসেন। যদিও সে সময় ওই কেবিন ক্রুদের স্বামীদের হস্তুক্ষেপে কিছুটা নিবৃত হন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল বারবার ফোন করে এবং ফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে পাইলট ইশরাত আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।