শনিবার১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ১১ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৫৩ কোটি টাকা অবৈধ ব্যয় জীবনবিমা কোম্পানির

কষ্টে উপার্জিত পলিসিহোল্ডার ও শেয়ারহোল্ডারদের ১৫৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা অবৈধ ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করেছে ২৭ জীবনবিমা কোম্পানি। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে (তিন প্রান্তিক) এমডি-চেয়ারম্যান এবং পরিচালনা-পরিষদের সমন্বয়ে এ টাকা হজম হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত কমিশন দিয়ে, বাড়ি-গাড়ি, খাতা-পত্র, চেয়ার-টেবিল এবং বাড়িভাড়াসহ বিভিন্নভাবে খরচ দেখিয়ে এই ১৫৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করে বলে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) মনে করছে।

কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে এ চিত্র বেরিয়ে এসেছে।
বিমা বিধিমালা ১৯৫৮ এর ৩৯ বিধি অনুসারে, জীবনবিমা কোম্পানি প্রথম বর্ষে ব্যবসার জন্য ব্যস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। এ আইন মোতাবেক কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখিয়েছে ২ হাজার ২৩১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১৫৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বেশি ব্যয় করেছে কোম্পানিগুলো। যা আইনের লঙ্ঘন।
সূত্র মতে, বিমা খাতে মোট ৩২টি লাইফ কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ২৭টি কোম্পানি প্রথম প্রান্তিকে ৫৪ কোটি ৯ লাখ, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৩২ কোটি ৪৫ লাখ এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ৬৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা করে সর্বমোট ১৫৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বেশি ব্যয় দেখিয়েছে।
আর এ অবৈধ ব্যয়ের শীর্ষে রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। কোম্পানিটি তিন প্রান্তিকে ৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বেশি ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখিয়েছে। গত ৯ মাসে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ব্যয় দেখিয়েছে ১৭৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। কিন্তু কোম্পানিটি নিয়ম অনুসারে ব্যয় করতে পারে ১৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা।
এরপর শীর্ষে রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান জীবনবিমা করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের ১৩৩ কোটি ১ লাখ টাকা ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখিয়েছে। নিয়ম অনুসারে কোম্পানিটি ব্যয় করতে পারতো ৮৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৪৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বেশি ব্যয় দেখিয়েছে।
অবৈধ ব্যয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যরেন্স লিমিটেড। কোম্পানিটি ৮১ কোটি ১৪ লাখের জায়গায় ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে ১০৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২২ কোটি ১৬ লাখ টাকা বেশি ব্যয় করেছে।
এ ছাড়াও ২০ কোটি ৮২ লাখ টাকা বেশি ব্যবস্থাপনা ব্যয় করে চতুর্থ স্থান দখল করেছে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। কোম্পানিটি ১০ কোটি ৫২ লাখের জায়গায় ব্যয় করেছে ৩১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
আর ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ২৩৮ কোটি ৫৪ লাখের জায়গায় ব্যয় করেছে ২৫৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা বেশি ব্যয় করেছে। ফলে অবৈধ ব্যয়ের শীর্ষ পাঁচে রয়েছে কোম্পানিটি।
একইভাবে ৮ কোটি টাকার বেশি ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে সানফ্লাওয়ার, হোমল্যান্ড, প্রগ্রেসিভ এবং সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। সন্ধানী ও মেঘনা লাইফ ব্যয় করেছে ৭ কোটির বেশি। ৪ কোটির বেশি খরচ করেছে প্রগতি লাইফ। ৩ কোটির বেশি ব্যয় দেখিয়েছে ডেল্টা, এলআইসি, বেস্ট ও গোল্ডেন লাইফ।
অপরদিকে ২ কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়েছে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। আর ১ কোটির বেশি ব্যয় দেখিয়েছে স্বদেশ, যমুনা, এনআরবি গ্লোবাল, মার্কেন্টাইল লাইফ, আলফা ও ইসলামী লাইফ।
এছাড়াও ১ কোটির নিচে অবৈধ ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে প্রটেক্টিভ, বায়রা, ডায়মন্ড লাইফ এবং ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ।
সার্বিক বিষেয়ে আইডিআরএ’র সদস্য ও মুখপাত্র গোকুল চাঁদ দাস বলেন, বিমা কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনাসহ অনান্য অনিয়ম খুঁজে বের করতে বিশেষ অডিটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রিপোর্টগুলো আসলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তবে একই সময়ে মেটলাইফ, গার্ডিয়ান সোনালী পপুলার লাইফ এবং জেনীথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি নির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের চেয়ে কম করেছে। গ্রাহকদের আস্থাও ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান তিনি।