–প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানি মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি খেতে পারেন।
মেথি শাক ও মশলা হিসাবে এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতুতে বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। কচি পাতা ও ডগা শাক হিসাবে খুবই জনপ্রিয় এবং মসলা হিসাবে মেথির ব্যবহার সর্বজন।
প্রতিদিনের তরকারির সাথে মেথি খাওয়া যায়। মেথির রয়েছে নানান ভেষজ গুণ। যেমন –
* ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য মেথি শ্রেষ্ঠ পথ্য। রক্তে চিনি কমানোর বিস্ময়কর উপাদান হিসেবে মেথি বিবেচিত হয়।
* সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে অথবা মেথি ভেজানো পানি খেলে রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। ডায়াবেটিস জনিত অসুখগুলো কম হয়, যাদের ডায়াবেটিস নেই মেথি তাদের জন্যও জরুরি।
* মেথি ভেজানো পানি পেটের যে কোনো অসুখে এমনকি পেপটিক আলসার সারিয়ে তুলতেও কাজে লাগে।
* সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে কৃমি ও নানান রোগ দূর হয়।
* খাবারে মেথির স্বাস্থ্যসম্মত উপস্থিতি ডায়াবেটিক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
* মেথি গ্যাস্ট্রিক ও বদহজমের মহৌষধ হিসেবে পরিচিত।
* মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য কালিজিরার মতো মেথি পিষে খেলে উপকার হয়।
* মুখের ঘা, গলার ইনফেকশন- এসব কিছুরই উপশমকারী হলো মেথি।
অল্প পানিতে মেথি সিদ্ধ করে সেই পানি ছেঁকে নিয়ে গড়গড়া করলে গলার ইনফেকশনে আরাম পাওয়া যায়।
* মেথির মধ্যে আয়রনের মাত্রা বেশি। তাই অনেকে মনে করেন মেথি খেলে শরীরে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায়। অর্থাৎ মেথি অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে। এটি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
* মেথির মধ্যে আছে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স। এ ছাড়া আছে মিনারেলস, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন।
* মেথি ন্যাচারাল হরমোন রিপ্লেসমেন্টে দারুণ সহায়ক, তাই মেনোপোজাল মহিলাদের জন্য মেথি একটি দারুণ ওষুধ।
* মেথিতে রয়েছে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন স্ত্রী হরমোন। বিশেষক্ষেত্রে যেসব নারী হরমোন জনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা মেথি খেতে পারেন।
* মানবদেহের হরমোনের স্তর বৃদ্ধিতে বা পরিমাণ বৃদ্ধিতে মেথি সহায়তা করে। মেথির রসে ‘সাপোনিস’ বা ‘ডাইওসজেনিন’ নামে এক ধরনের যৌগ পদার্থ আছে, যা মানবদেহের হরমোন স্তর বা এর পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
* ব্রেস্ট এবং কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে মেথি।
* সাইনাসের সমস্যা থাকলে বা হার্ট ভালো রাখতে দুই চামচ করে মেথি খেতেই পারেন।
* মাসিকের ব্যথায় কাঁচা মেথি চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
* সকালে খালি পেটে মেথিদানা চিবিয়ে খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। মেথিতে এক ধরনের দ্রবণীয় আঁশ রয়েছে যা পাকস্থলীকে ভরাট এবং স্ফীত করে ফেলে যার ফলে ক্ষুধা দূর হয়।
* লেবু এবং মধুর সঙ্গে মেথিদানা গুড়া মিশিয়ে খেলে গলা ব্যথা উপশম হয়। মেথির প্রাকৃতিক নির্যাস গলাকে শীতল করে ফেলে যার ফলে কাশি এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণে আসে।
* প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এক চামচ মেথিদানা খেলে বিভিন্ন এ্যাসিড নিঃসরণ করে এবং বুকের জ্বালা কমায়। এর জন্য মেথি দানাকে প্রথমে পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপরে খাবার উপযুক্ত করতে হবে।
* মেথি দেহের ভেতরের ক্ষতিকর টক্সিনকে বের হয়ে যেতে সহায়তা করে। ফলে হজমক্রিয়া ভালোভাবে হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
* মেথি বার্ধক্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে তারুণ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
* মেথি মৌসুমি রোগগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
= = = = রূপচর্চাতেও মেথির ব্যবহার রয়েছে ব্যাপক। যেমন –
* মেথি নারকেল তেলের বোতলে রেখে দিন। মেথি ভেজা এই তেল নিয়মিত ব্যবহারে চুলের গোড়া হয় শক্ত ও মজবুত।
* চুলের যত্নে মেথির কোন তুলনা নেই। মেথি গুঁড়ো টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগালে চুল হয় কোমল ও ঝরঝরে।
* মেথি ভিজিয়ে তা বেটে মেহেদি ও ডিমের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে আধ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়া রোধ হবে।
* মেথি গরমজনিত ত্বকের অসুখে অত্যন্ত উপকারী। ত্বকে ঘা, ফোড়া, ইরিটেশন ইত্যাদি দূরীকরণে মেথির জুড়ি নেই।
* মেছতায় মেথি বাটা নিয়মিত ব্যবহার করলে তা সহজে ছড়িয়ে পড়ে না এবং ধীরে ধীরে কমে যায়।
“ ৩০টি দেশের ২৫ হাজার পুরুষের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে, যেসব পুরুষ তাদের যৌনশক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তারা মেথির রস দিনে দু’বার পরিমাণ মতো সেবন করলে আশ্চর্য সুফল পেতে পারেন। এই পরিমিত সেবনে তাদের দাম্পত্য জীবন হয়ে উঠবে আরও সুখময়”।
হতাশা, অবসাদ, অতিরিক্ত শারীরিক ওজন ও অ্যালকোহল পানে অসুস্থতা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি বহু অসুখ ও শারীরিক সমস্যার জন্য মেথির রস এক মহৌষধ।
“ গবেষণায় বলা হয়, অন্তত ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত দিনে দু’বার করে এর রস নিয়মিত পান না করলে তেমন উপকারিতা পাওয়া যাবে না। শুধু তাই নয়, আপনি যদি মেথি সরাসরি খেয়ে ফেলেন তবে এটি আপনার ডায়েটে সহায়তা করবে”।
যেকোনো সবজি মাছ মাংশ পরিমানমত মেথি দিয়ে রান্না করলে খুব ভালো সুবাস ও টেস্ট হয়! মেথি বা মেথি গুড়ো দুই ভাবেই তরকারিতে ব্যবহার করা যায়! পাঁচ ফোড়নের অন্যতম একটি উপাদান হলো মেথি! যা আচার বা সবজি রান্নাতে ব্যবহৃত হয়! অনেকে মেথি গুড়ো করে পানি দিয়ে সরাসরি খেতে পছন্দ করে !
মেথি ভর্তা বানিয়ে ভাতের সাথে খেতে বেশ ভালো লাগে। সবচেয়ে সহজ হলো মসলার সাথে একবারে মিশিয়ে তরকারী রান্নায় ব্যবহার করা ।
মেথি খুবই উপকারি প্রাকৃতিক উপাদান, পরিমান মতো যেকোন রান্নাতে উপযোগী। মেথি শাক খুবই সুস্বাদু যদি আলু দিয়ে রান্না করে পরিবেশন করেন।
ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন মেথি মানব শরীরে বেশ কিছু কার্যকরী ভূমিকা রাখে। মেথিতে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, পটাশিয়াম, উপক্ষার, ভিটামিন সি এবং নিয়াসিন। স্বাস্থ্যকর উপাদান মেথিতে রয়েছে বলে মেথি মানব শরীরের জন্য বেশ স্বাস্থ্যকর।
তবে মেথি আগুনে ভেজে খাওয়া ঠিক নয়। মেথি ভাজলে এর গুণাগুণ অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই কড়া রোদে মেথি শুকিয়ে খাওয়া যেতে পারে এবং সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
সূত্র-নেট