নিজস্ব প্রতিবেদক- একই এলাকায় দুজনের নামই ফরিদ হোসাইন। বাবার নামও একই মৃত শুকুর আলী। একই গ্রামের বাসিন্দাও তারা। সবকিছুতে এমন মিল থাকায় তৈরি হয়েছে জটিলতা। এক ফরিদের নামের গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় পুলিশ ধরে নিয়ে আসে আরেক ফরিদকে। সেই ‘নকল’ ফরিদকে ১০টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় তারা।
এক মামলায় দুই মাসের সাজাও খাটতে থাকেন তিনি। আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য তাকে ঢাকা বিভাগীয় পরিবেশ আদালতের বিচারক মো. শওকত হোসেনের আদালতে হাজির করা হয়। তখন আদালত শনাক্ত করেন এই ফরিদ অপরাধী ফরিদ নন। এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্ম দিয়েছে পুলিশের একটি ভুল।
ঘটনাটি চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার নাটমুড়া গ্রামের। নানা ঝামেলার পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি মিলেছে নিরপরাধ ফরিদ হোসাইনের। এমন ভুলের জন্য তার কাছে ক্ষমা চেয়েছে পুলিশ। তবে এখনো আসল ফরিদ হোসাইনকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
ঘটনার শিকার ফরিদের স্বজন, পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, আসল অপরাধী ফরিদ হোসাইন ১০ মামলার আসামি। প্রতারণাসহ নানা অভিযোগে মামলাগুলো করা হয়। এর মধ্যে একটি মামলায় ফরিদের দুই মাসের সাজা হয়। বাঁশখালী থানার এএসআই আব্দুল মুনাফ গত বছর ৪ ডিসেম্বর পুকুরিয়া গ্রাম থেকে ফরিদকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার করে। ওই দিনই তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
আসল ফরিদের নামে থাকা আরও ৮টি মামলায়ও নিরপরাধ ফরিদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর মধ্যে একটি প্রতারণার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মামলার বাদী। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার ঢাকার পরিবেশ আদালতে ফরিদকে হাজির করা হয়। সেখানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আদালত দেখতে পান, এই ফরিদ আসল অপরাধী ফরিদ নন। ঘটনার শিকার হওয়ায় তাকে জামিন দেন আদালত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এক মামলায় দুই মাসের সাজায় কারাগারে থাকা অবস্থায় ফরিদের বাকি ৮ মামলায় জামিন করানো হয়। ফরিদের ছেলের অনুরোধে স্থানীয় একজন ইউপি সদস্য তদবির করে ৮ মামলায় ফরিদের জামিন করান।
আসল ফরিদ/নকল ফরিদ বিভ্রান্তিসহ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে আগামী ২৩ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন পরিবেশ আদালতের বিচারক মো. শওকত হোসেন। এই প্রতিবেদনে সব বিভ্রান্তি দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, আসামির নাম, বাবার নাম ও গ্রামের নাম সব মিল থাকায় এমনটি হয়েছে। তা ছাড়া গ্রেপ্তার অভিযানের সময় ফরিদ নিশ্চুপ থাকায় পুলিশও কিছু বুঝতে পারেনি। আমরা আসল অপরাধী ফরিদকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে ফরিদের পরিবারও এখন আর কোনো কথা বলতে চাইছে না।
