জেলা পরিষদের আকার ছোট হচ্ছে। বর্তমানে এক চেয়ারম্যান, ১৫ সাধারণ সদস্য এবং ৫ সংরিক্ষত নারী সদস্য- এই ২১ জন নিয়ে স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে পুরনো এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্তমান ঢাউস আকারের এই পরিষদকে ছোট করতে ‘জেলা পরিষদ আইন- ২০০০ সংশোধনে হাত দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।”
;সংশোধিত আইনের খসড়া অনুমোদনের জন্য ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আগামী ২২ নভেম্বর মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনটি ওঠার কথা। পরিধি ছোট হলে চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রত্যেক উপজেলা থেকে একজন করে সাধারণ সদস্য এবং প্রতি তিন উপজেলার জন্য এক সংরক্ষিত নারী সদস্য নিয়ে পরিষদ গঠন করা হবে।”
;জেলা পরিষদ আইনের ২০০০(৮২) ধারা অনুযায়ী ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর জেলা পরিষদগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে ২০১৭ সালে নির্বাচকম-লীর ভোটের মাধ্যমে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যরা নির্বাচিত হন। উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও পৌরসভার (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) জনপ্রতিনিধিরাই জেলা পরিষদ নির্বাচনের নির্বাচকম-লী (ইলেকটোরাল কলেজ)।”
;মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন- কোনো কোনো জেলা ১৫/১৬টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। তাদেরও জেলা পরিষদ ২১ সদস্যের। আবার মেহেরপুর জেলা মাত্র ৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। তাদেরও ২১ জনের জেলা পরিষদ। সব জেলার জন্য অভিন্ন জাতীয় অর্গানোগ্রাম কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে উপজেলার সংখ্যা বিবেচনায় জেলা পরিষদের আকার ছোট-বড় হওয়া যুক্তিযুক্ত।”
;এ জন্য সরকার আইন সংশোধন করে জেলা পরিষদের আকার ছোট করবে। তারা আরও জানান, বর্তমান জেলা পরিষদের মেয়াদ আগামী বছর শেষ হচ্ছে। এর পরই সংশোধিত আইন অনুযায়ী নির্বাচকম-লীর ভোটে নতুন জেলা পরিষদ গঠন করা হবে।এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে জেলা পরিষদ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা পরিষদচেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।”
;তবে সব চেয়ারম্যান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। কর্মশালায় চেয়ারম্যানদের কয়েকজন নির্বাচকম-লীর পরিবর্তে সরাসরি জনগণের ভোটের মাধ্যমে পরিষদ গঠনের দাবি জানান। জেলা পরিষদের বেদখল শত শত কোটি টাকার সম্পদ উদ্ধারে পরিষদের সিইওকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ারও দাবি জানান তারা।এদিকে ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশের মোনেম এবং রাজশাহী বিশ বিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডের যৌথ গবেষণায় জেলা পরিষদের নানামুখী চ্যালেঞ্জের কথা উঠে আসে। ”
;গবেষণায় বলা হয়, ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, আইনের আওতায় সীমিত প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা এবং পর্যাপ্ত বিধি ও প্রবিধানের অভাব রয়েছে। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা এবং স্থানীয় পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ে দুর্বলতা রয়েছে। এ ছাড়া সামষ্টিক সক্ষমতার অংশ হিসেবে আর্থিক সীমাবদ্ধতা, স্থানীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাজেট প্রণয়ন এবং প্রাপ্ত সম্পদ অনুযায়ী ফলপ্রসু ও কার্যকরভাবে সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে জেলা পরিষদ বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে।”
;গবেষণায় বলা হয়, জেলা পরিষদ দেশের প্রাচীনতম স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হলেও এটি তেমন সক্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। ২০১৭ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে পুনর্গঠনের আগ পর্যন্ত বলা যায় কিছু রুটিন কাজেই সীমাবদ্ধ ছিল প্রতিষ্ঠানটি। সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদে সরাসরি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সব স্তরের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কথা বলা হলেও জেলা পরিষদে সেটি হচ্ছে না।”
;স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যমান বাস্তবতা বিবেচনায় আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা জেলা পরিষদকে আরও কার্যকর করে গড়ে তুলতে চাই। তিনি আরও বলেন, সিইওকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে আমি জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের অনুরোধ জানান।;