রবিবার১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ১০ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মন্ত্রীর ভাগ্নের পকেটে সরকারী রাজস্বের ভাগ

দেশের একজন শ্রমিক বিদেশ যেতে হলে তাকে ৩০০ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। আমি প্রবাসী নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধনের টাকা নেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। অ্যাপসটি তৈরি করার পর গত চার মাসে প্রায় আড়াই লাখ বিদেশগামী শ্রমিকের কাছ থেকে সাড়ে ৭ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে “

;নিয়ম অনুযায়ী এ অর্থ সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা থাকলেও আড়াই কোটি টাকা জমা হয়েছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে। অ্যাপস তৈরির নামে একটি চুক্তির মাধ্যমে এ অর্থ নিয়েছে থ্যান সিস্টেম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটির পকেটে যাবে সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা।”

;বেসরকারি এ প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদের ভাগ্নে নামির আহমেদ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন- সরকারের রাজস্ব ভাগাভাগির আইনগত কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংযুক্ত তহবিলের পরিবর্তে রাজস্বের এ অর্থ জমা হচ্ছে একটি বেসরকারি ব্যাংকে। এটি পিপিআর ২০০৮, সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৯-এর ধারা ৭ এবং ট্রেজারি রুলসের রুল-৩ ও ৭ (১)-এর সুস্পষ্ট লংঘন বলে কর্মকর্তারা বলছেন।”

;এভাবে চলতে থাকলে এতে একদিকে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে, অন্যদিকে বিএমইটি কার্যত অচল হয়ে যাবে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার গতকাল বলেন- বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সরকারের রাজস্ব বা সেবা থেকে যে অর্থ আসে তা এভাবে ভাগাভাগি করার সুযোগ নেই “

;বিএমইটি যদি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে করত; তাহলে হয়তো এমনটি হতো না। সরকার যদি মনে করে রাজস্ব বা সেবার অর্থ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভাগাভাগি করবে; তাহলে অবশ্যই বিধি পরিবর্তন করতে হবে।মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি সূত্র জানায়, থ্যান সিস্টেম নামের প্রতিষ্ঠানটির মালিক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর ভাগ্নে নামির আহমেদ। ”

;চলতি বছরের ৮ মে থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ লোক এ অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছে। সেখানে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে মোট ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা নিবন্ধন ফি হিসেবে পেলেও সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। বাকি ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা নিয়েছে নামিরের প্রতিষ্ঠান। ”

;চুক্তি অনুযায়ী পাঁচ বছর এ প্রতিষ্ঠানটি মোট সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা নেবে। যদিও জেলা পর্যায়ে বিএমইটির ৪২টি ডেমো অফিস রয়েছে। সেখানেও নিবন্ধন চলছে। তবে সেখানে এখন আর খুব একটা লোকজন যাচ্ছে না। ”

;থ্যান সিস্টেমের হেড অব অপারেশনস তানভির সিদ্দীকী  বলেন-বিএমইটির নির্ধারিত ফি তাদের কোষাগারে জমা হচ্ছে। আমরা চুক্তি অনুযায়ী ২০০ টাকার স্থলে ৩০০ টাকা নিচ্ছি। এখানে ১০০ টাকা আমরা পাচ্ছি। সেই টাকা থেকে অ্যাপসের সব খরচ বহন করি। এ প্রতিষ্ঠানের মালিক মন্ত্রীর আপন ভাগ্নে নামির জানিয়ে তিনি বলেন-এই মুহূর্তে নামির সাহেব দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। উনাকে পাওয়া সম্ভব হবে না।”

;এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের (বাজেট অনুবিভাগ) উপসচিব মো. তৌহিদুল ইসলাম  বলেন-সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন ও ট্রেজারি রুলস অনুযায়ী রাজস্ব ও বিভিন্ন সেবা ফি সরাসরি সরকারের সংযুক্ত তহবিলে জমা হবে। এখানে সোনালী ব্যাংক ব্যতীত অন্য কোনো ব্যাংকে এ ধরনের লেনদেনের আইনগত বৈধতা নেই। ”

;এ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান যদি অ্যাপস তৈরি করে রাজস্ব বা সেবা ফি সংগ্রহ করে তাহলে সেই অ্যাপস তৈরির জন্য সরকারের ব্যয় খাত থেকে টাকা খরচ করতে পারে। কোনোভাবেই রাজস্ব বা সেবা ফি আদায়ের আয় করা খাত থেকে টাকা খরচ করার সুযোগ নেই।”

;এসব বিষয়ে কথা বলতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।”