রবিবার২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ২৬শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩৪ জনের করোনা পজিটিভ, পুনঃপরীক্ষায় ৩০ জনেরই নেগেটিভ!

=কুষ্টিয়া ও যশোরে নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ ধরা পড়া ৩৪ জনের মধ্যে ৩০ জনই করোনা আক্রান্ত নন। বৃহস্পতিবার রাতে পুনঃপরীক্ষার পর আইইডিসিআর এমন প্রতিবেদন দিয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান। তবে তিনি আগের পজিটিভ আসা রিপোর্ট নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা ও বিতর্ক। অনেকে এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবি তুলছেন। গোটা বিষয়টি নিয়ে বিব্রত চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগও।

চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর গ্রামের একজন কিডনি রোগী গত ৬ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকাতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হন।

বিষয়টি জানার পর হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের ১১জন চিকিৎসক নার্সসহ ২১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে গত ২২ এপ্রিল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে পাঠানো হয়। পরদিন ২৩ এপ্রিল সেই ২১ জনের মধ্যে ছয়জনের করোনা পজিটিভ আসে।

একই ভাবে গত ২৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ ৫১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে কুষ্টিয়া মেডিকেলের পিসিআর ল্যাব পাঠান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ২৮ এপ্রিল তাদের প্রতিবেদন দেন। ওই প্রতিবেদনে চুয়াডাঙ্গার দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একটি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাত চিকিৎসকসহ ২৮ জনের করোনা পজিটিভ আসে।

একদিনে এত সংখ্যক করোনা আক্রান্ত রোগী ধরা পড়ার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জেলাজুড়ে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়িসহ আশপাশের এলাকাও লকডাউন করা হয়।
একই সঙ্গে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাত চিকিৎসকসহ ১৭ জন আক্রান্তের খবরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লকডাউন ঘোষণা করা হয়। সেখানে থাকা রোগীদেরও স্থানান্তরিত করা হয় সদর হাসপাতালে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির জানান, ২৮ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসার ওই দিন রাত ১০টার দিকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ আরেকটি রিপোর্ট দেয়। সেখানে ওই ২৮ জনের রিপোর্ট অমীমাংসিত বলে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে জানানো হয় অমীমাংসিত রিপোর্টর নমুনাগুলো ঢাকা আইইডিসিআরে পাঠানো হবে। তারা পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবেন।

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান জানান, মোট ৩৪ জনের নমুনা পুনরায় পরীক্ষা করে আইইডিসিআর চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছে। এটি বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, রিপোর্টে দেখা গেছে যশোর থেকে পজিটিভ রিপোর্ট দেওয়া ছয়জনের মধ্যে তিনজন ও কুষ্টিয়া থেকে পজিটিভ রিপোর্ট দেওয়া ২৮ জনের মধ্যে ২৭ জনই করোনা আক্রান্ত নন।

কুষ্টিয়া মেডিকেলে নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট আসা একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই সংকটময় মুহূর্তে আমরা যাদের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল, সেই স্বাস্থ্য বিভাগের এমন তামাশা কখনো প্রত্যাশা করি না আমরা।

কুষ্টিয়া মেডিকেলে নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট আসা আলমডাঙ্গা উপজেলার আরেকজন জানান, পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর আমরা গোটা পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। সামাজিকভাবেও আমাদের নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন হতে হয়েছে।

সুজনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহাবুল ইসলাম সেলিম জানান, করোনা নিয়ে দুইবারে দুই রকম রিপোর্ট আসার বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করেছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনোভাবেই ছোট করে ভাবার সুযোগ নেই।

কুষ্টিয়া স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান (সিভিল সার্জন) ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে শুক্রবার দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেছেন, রিপোর্ট নিয়ে আমরা বিব্রত।

ল্যাবের দায়িত্বরতদের কোনো ত্রুটি বা পরীক্ষার যন্ত্রপাতিতে কোনো সমস্যা ছিল কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আইইডিসিআর থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল এসেছে। তারা বিষয়গুলো দেখভাল করছে।