শুক্রবার২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হাজীগঞ্জে রেল কর্মকর্তা অফিস করেন  লুঙ্গি পরে

লুঙ্গি পরেই অফিস করেছেন স্টেশন মাস্টার মো. মারুফ হোসেন। ছবি সংগৃহীত।

 বাংলা সংবাদ২৪ সংবাদদাতা– চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জে লুঙ্গি পরেই নিয়মিত অফিস করাসহ নানান অভিযোগ রয়েছে রেলস্টেশনের কর্মকর্তা (স্টেশন মাস্টার) মো. মারুফ হোসেনের বিরুদ্ধে।
রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সহকারি স্টেশন মাস্টারের কক্ষে তিনি দায়িত্বরত কর্মকর্তার চেয়ারে লুঙ্গি পরেই বসে আছেন এবং ট্রেনের টিকেট বিক্রিসহ নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

প্রথমে অন্য কোনো কর্মকর্তা ভাবলেও পরে মো. মারুফ হোসেনের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হলাম, তিনিই স্টেশন মাস্টার এবং লুঙ্গি পরেই তিনি অফিস করছেন। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে সরকারিভাবে নির্ধারিত যাতায়াত ভাড়ার অতিরিক্ত মূল্যে ট্রেনের টিকিট বিক্রি, রেলওয়ের গোডাউন ভাড়া দেয়া এবং রেলের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, স্টেশন মাস্টার মারুফ হোসেন লুঙ্গি পরেই নিয়মিত অফিস করেন। দূরপাল্লার টিকিটে (লাকসাম, চট্টগ্রাম) ২০ থেকে ৫০ টাকা করে বেশি রাখেন।

গত কয়েকমাস ধরে রেলের গোডাউন ভাড়া দিয়ে অর্থ আদায় করছেন এবং রেলে সম্পত্তি (ভূমি) চাষের জন্য ইজারা এনে স্থানীয়রা ঘর নির্মাণ করছেন। অথচ তিনি এ বিষয়ে কোনো ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না।

সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মারুফ হোসেন মার্জিত পোশাকতো দূরে থাক একেবারে বাসার পোশাকেই অফিস করছেন এবং আরাম আয়েসেই তার দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অর্থাৎ নিজের অফিসকে অনেকটা বাসস্থানের মতো তৈরি করে ফেলেছেন। তার সঙ্গে কথা বলার সময়ে লুঙ্গি পরা পোশাকেই যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেন মারুফ হোসেন। এ সময় একজন যাত্রী ট্রেনের টিকেট ফেরৎ দিতে এসেছেন। তিনি চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য ২৬০ টাকা দিয়ে একটি টিকেট ক্রয় করেন। যার সরকারিভাবে নির্ধারিত ফি ২২০ টাকা।

অথচ নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত মূল্যে ট্রেনের টিকেট বিক্রির সুযোগ নেই। এবং মার্জিত পোশাকেই অফিসে আসতে হয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। কারণ, সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট ড্রেসকোড রয়েছে এবং তা-মেনেই তাদের অফিস করার বিধান রয়েছে।

এই সম্পর্কে (অতিরিক্ত মূল্যে টিকেট বিক্রি) জানতে চাইলে, মারুফ হোসেন কোনো জবাব দেননি। তবে পোশাকের বিষয়ে তিনি বলন, আমি একা মানুষ। সবকিছু আমাকেই দেখতে হয়। এখন দুপুর বেলা, গোসল করতে যাবো। তাই লুঙ্গি পরা অবস্থায় আছি। গোডাউন ভাড়ার বিষয়ে মারুফ হোসেন বলেন, গোডাউন ভাড়া দেয়া হয়নি। রেললাইনের কাজ চলমান রয়েছে। যিনি (ঠিকাদার) কাজ পেয়েছেন। তার মালামাল গোডাউনে রাখা হয়েছে। আর ভূমি রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, যার কাছে রেলের সম্পত্তি দখলে, তারা ইজারা নিয়েছেন।

শুধুমাত্র চাষাবাদের জন্য ইজারা, দোকান-ঘর নির্মাণের জন্য নয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটার জন্য আলাদা ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে তিনি কোনো ডকুমেন্ট (লিখিত) দেখাতে পারেননি।

এ ব্যাপারে রেলওয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ডিভিশনাল কমার্শিয়াল অফিসার (ডিসিও) আনসার আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়, তিনি বলেন, এসব বিষয়ে পরিদর্শক পাঠিয়ে তদন্ত করা হবে।