সোমবার৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় তিন নদীর মোহনায় ভূমিদস্যুরা রাজত্ব কায়েম করে গিলে ফেলছে নদী!

আব্দুল্লাহ আল মানছুরঃ- কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার ২নং চৌয়ারা ইউনিয়নের টঙ্গীরপাড় এলাকার সুইচগেটে এসে মিলিত হয়েছে তিনটি নদী। ডাকাতিয়া, গুইঙ্গাঝুরি এবং সোনাইছড়ি- এই তিন নদীর মোহনায় ভূমিদস্যুরা নিজেদের রাজত্ব কায়েম করে গিলে ফেলছে নদী তিনটির মোহনার অববাহিকা।

সুইচ গেট নামে পরিচিত স্থানে তিন নদীর মোহনায় চলতি শুকনো মৌসুমে প্রতিদিন ৭টি এক্সেলেটর (ভেকু) দিয়ে মাটি কেটে দূর দূরান্তে পাচার করা হচ্ছে হাইড্রোলিক ট্রাকের মাধ্যমে। যার ফলে নদীর অস্তিত্ব প্রায় ধীরে ধীরে বিলীন হচ্ছে। স্থানীয় রাজনীবিদ এবং প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে নদী তিনটির মাটি খেয়ে সাবাড় করছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে- চৌয়ারা ইউনিয়নের ভূমিদস্যু চক্রের সদস্য যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম, ইউপি মেম্বার আবদুল মজিদ, মনির হোসেন, পিপুলিয়া এলাকার যুবলীগ নেতা শাহ আলম, শাহজাহান, আওয়ামীলীগ নেতা আবুল হোসেনসহ অন্যান্য প্রভাবশালী নেতারা মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন মাটি পাচারের বিষয়টি অবগত থেকেও প্রভাবশালী মহলের তীব্র চাপের মুখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকছে না।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান- কুমিল্লা অঞ্চলের নদীগুলোর ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিকভাবে গঠন-গড়ন বালুমাটির এবং সেগুলো অত্যন্ত নরম, শিথিল। যার কারনে এ অঞ্চলের মাটির চাহিদা রয়েছে বেশ। নদী কাটার বিরুদ্ধে সরকারি  বিধি নিষেধ থাকলেও প্রতিদিনই সিন্ডিকেট সদস্যরা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবাধে মাটি কেটে বিক্রি করছে।

ফলে হারিযে যাচ্ছে তিনটি নদীর ইতিহাস এবং ঐতিহ্য। প্রভাবশালীরা পেশিশক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রায় ২মাস ধরে অবৈধভাবে এক্সেলেটার (ভেকু) দ্বারা মাটি ও বালু উত্তোলন করছে। অজ্ঞাত কারণে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছুসংখ্যক অসাধু মাটি ও বালু ব্যবসায়ী জমিতে অন্তত ১০টি ভেকু মেশিন দিয়ে অন্তত কয়েকশ ফুট মাটি উত্তোলন করে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন কোম্পানিতে সরবরাহ করছেন। এতে নদী পাড়ের জমিগুলো ক্রমে ধসে পড়ে বিলীন হচ্ছে এবং এলাকার নিরীহ চাষীরা তাদের চাষাবাদযোগ্য জমি হারাচ্ছেন।এভাবে মাটি কাটার মাধ্যমে জমিগুলো গভীর জলাশয়ে পরিণত হয়ে কৃষিতে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালক কামরুজ্জামান বলেন- প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করে নদীর মাটি কাটার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে নদী হতে অবৈধ ভাবে মাটি কাটার বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজর মীরের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান- নদী হতে মাটি কাটার বিষয়টি সম্পূনই অবৈধ। অভিযোগটির বিষয়ে পূর্বে কেউ অবগত করেননি, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হইবে।