শনিবার১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ১১ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্লাসরুমে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগল

ছবি- সংগৃহীত।

বাংলা সংবাদ২৪ ডেস্ক— কাগজ-কলম, আর সাইনবোর্ডে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৮২ সালে। অথচ প্রায় দেড় মাস আগে তোলা হয়েছে একটি টিনের ঘর। তবে এখনো বেড়া দেয়া হয়নি। নেই কোনো বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিলসহ আসবাবপত্র। ফাঁকা ঘরের মধ্যে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগল। এই চিত্র নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চরব্রাক্ষ্মণডাঙ্গা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার।

এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ জানান, এখানে কোনো দিন ক্লাস হয়নি। দেখা মেলেনি কোনো শিক্ষক-কর্মচারীদের। গত ১২ জুন প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিভুক্তির ঘোষণা দিলে চরব্রাক্ষ্মণডাঙ্গায় হঠাৎ করে মাদরাসার নামে ঘর তুলে কতিপয় ব্যক্তি ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠা সাল ১৯৮২ দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

 সাবেক ইউপি সদস্য খায়রুল ইসলাম জানান, এটি নাম সর্বস্ব মাদরাসা। এর কার্যক্রম খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়ায় ফায়দা লুটতে এলাকার কয়েক ব্যক্তি হঠাৎ করে একটি ঘর তুলে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, মাদরাসাটি পার্শ্ববর্তী মসজিদের জমি ব্যবহার করে উঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে এমপিওভুক্তির কথা বলে ৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে। এভাবে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যরা প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

তাইজুল ইসলাম জানান, প্রায় দেড় মাস আগে একটি টিনের ঘর তুললেও নেই কোনো বেড়া। নেই চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্রসহ কোনো শিক্ষা উপকরণও। কখনও ক্লাস হয়নি। অথচ ইবতেদায়ি মাদরাসায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস রয়েছে।

এ বছর এই মাদরাসার নামে ১২ শিক্ষার্থী লোহাগড়ার নখখালী দাখিল মাদারাসা কেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। তাদের অনেকেই দুই থেকে তিন বছর আগেই ব্রাক্ষ্মণডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েচিল। এদের অনেকে আবার ব্রাক্ষ্মণডাঙ্গা হাফেজিয়া মাদরাসার ছাত্র।

বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে তারা দুই বিষয়ে পরীক্ষার পর আর কেন্দ্রে যায়নি। এদিকে হঠাৎ করে মাদরাসাটি দৃশ্যমান হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত দাবি করেছেন এলাকাবাসী। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দফতরেও চিঠি দিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে মাদরাসার সুপার মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, সরকার এমপিওভুক্ত ঘোঘণার পর নতুন করে মাদরাসার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে ক্লাস চলবে। ভুয়া পরীক্ষার্থীর বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, এলাকাবাসী জোর করে ১২ জনের পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়।

এদিকে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল আহাদ  এ ব্যাপারে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

লোহাগড়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ও নখখালী কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজ্জাদুল করিম জানান, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী দু’টি বিষয়ে অংশগ্রহণের পর চরব্রাক্ষ্মণডাঙ্গা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার ১২ শিক্ষার্থী আর পরীক্ষা দিতে আসেনি। আর প্রথম থেকেই এক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তবে কেন তারা অনুপস্থিত ছিল, তা জানা নেই।

 জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে সরকারের পক্ষ থেকে ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তের ঘোষণা এসেছে। এখন যাচাই-বাচাই চলছে। কোনো মাদরাসাকে চূড়ান্ত করা হয়নি।