বুধবার১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি২৭শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেখতে হবে ঋণগ্রহীতাদের সমস্যাও: গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেছেন, ঋণ বিতরণের পর শুধু আদায় করার মানসিকতা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। ঋণগ্রহীতার সমস্যাগুলোও দেখতে হবে। এজন্য গ্রহীতার প্রতি ব্যাংকের সহযোগিতামূলক মনোভাব থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে ঋণগ্রহীতার সক্ষমতা মূল্যায়নে দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর জন্য প্রণীত ইন্টারনাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং সিস্টেম (আইসিআরআর) নীতিমালা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এ কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, ঋণ বিতরণের পর ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছে আশা করে শুধু পরিশোধের (রিপেমেন্ট)। ঋণগ্রহীতাদের অন্য কোনো বিষয় নিয়ে ব্যাংক কখনো ভাবে না। অনেক সময় বিদ্যুৎ, গ্যাসের অভাবে কারখানা চালু করতে পারে না। অনেক কারখানা চালু হওয়ার পরে নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাংকগুলোর এসব বিষয় মনে রাখা উচিত।

কারণ এভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া অথবা বিদ্যুৎ, গ্যাসের অভাবে কারখানা চালু করতে না পারায় গ্রাহককে নতুন করে সহযোগিতা না করলে ওইসব কারখানা আর কোনোদিন চালুই হবে না। এ ধরনের গ্রাহককে ব্যাংক সহযোগিতা করলে আবার নতুন করে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারবে। শুধু গ্রাহকই ব্যাংককে সহযোগিতা করবে না, ব্যাংকও গ্রাহককে সহযোগিতা করবে। এ বিষয়টি ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয় থেকে শুরু করে শাখা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে।

ফজলে কবির বলেন, ঋণগ্রহীতার সক্ষমতা মূল্যায়নে প্রণীত নীতি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমানোর পাশাপাশি সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনে সহায়তা করবে। তাই আমি মনে করি, আইসিআরআর নীতিমালা একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
গভর্নর বলেন, নতুন অর্থমন্ত্রী বলেছেন, খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না, এখন থেকে কমতে থাকবে। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫ শতাংশে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতে সার্বিক সম্পদ ও মুনাফা অর্জনে ঝুঁকি তৈরি করে।

আমি আশা করছি, ঋণগ্রহীতাদের জন্য নতুন নীতিমালা খেলাপি ঋণ আদায়, মুনাফা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ব্যাংকগুলো ক্রেডিট লস কমিয়ে এনে বেটার পোর্টফোলিও তৈরি করবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ লক্ষ্যমাত্রা ৮ শতাংশ অর্জন করতে হলে আমাদের নতুন নতুন বিনিয়োগ দরকার। আর বিনিয়োগ করার আগে ব্যাংকগুলো গ্রহীতার সক্ষমতা যাচায়ে এ নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এবিবির চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, গ্রাহকের কাছ থেকে শতভাগ জামানত নেওয়া অনেক কঠিন হবে। তবে নতুন এ নীতিমালার গ্যারান্টিসহ অন্যান্য শর্তগুলো ভালো হয়েছে। আবার ৫০ লাখ টাকার বেশি এসএমই ঋণের জন্য নীতিমালা বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন হবে বলেও মত দেন ব্যাংক এমডিদের সংগঠনের এ নেতা।

নীতিমালার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বিআইবিএম’র প্রফেসর ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম হুসনে আরা শিখা।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএম’র ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক আব্দুর রহিম।

নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির কো-অর্ডিনেটর ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফরাহ মো. নাসের বলেন, নীতিমালাটি ব্যাংক, ঋণগ্রহীতা ও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে প্রণয়ন করা হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল।

আইসিআরআর চালু করার আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৯৩ সালে ব্যাংক খাতে ঋণ ঝুঁকি নির্ণয়ে লেন্ডিং রিস্ক অ্যানালাইসিস (এলআরএ) কাঠামোর সূচনা করে। এক কোটি টাকার বেশি অঙ্কের ঋণের ক্ষেত্রে এলআরএ কাঠামো প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু ওই কাঠামোটি খুব একটা কাজে না আসায় ২০০৩ সালে কোর রিস্ক ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন (সিআরএমজি) চালু করা হয়।