রবিবার১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ১০ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোজাদারের গুরুত্ব, মর্যাদা ও উপকারিতা

রোজার গুরুত্ব :-

রাসুল (সাঃ) বলেছন রমজান মাসে আমার উম্মত কে পাঁচটি নিয়ামত দান করা হয়েছে যা আগের উম্মতকে দেওয়া হয়নি –

(১) রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়ে বেশী ঘ্রানযুক্ত

(২) ইফতার পর্যন্ত রোজাদারের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন

(৩) রোজাদারের জন্য প্রতিদিন জান্নাতকে সজ্জিত করা হয়

(৪) শয়তানকে বন্দি করা হয়

(৫) রমজানের শেষ রাতে সকল উম্মতকে মাফ করা হয়।

রোজার মর্যাদা ও উপকারিতা:-

১) জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল

২) জান্নাতে যাওয়ার উৎকৃষ্টতম উপায় এবং রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ

৩) গুনাহ মোচনের অন্যতম মাধ্যম

৪) রোজা কিয়ামতের দিন মুমিন ব্যক্তির জন্য শুপারিশকারী হবে

৫) রোজার পুরষ্কার আল্লাহ নিজ হাতে প্রদান করবেন

৬) রোজার মাধ্যমে আচার-আচরণ ও চরিত্র সুন্দর হয়

৭) রোজা মানুষকে আখেরাত মুখী করে

৮) সামাজিক সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ব বোধ সৃষ্টি করে

৯) এটি আল্লাহ ও বান্দার মাঝে নিতান্ত গোপন ইবাদত তাই এর মাধ্যমে আল্লাহ ও বান্দার মাঝে সম্পর্ক দৃঢ়তর হয়

১০) আল্লাহর ইবাদতের এক অভূতপূর্ব ট্রেনিং স্বরুপ।

রহমাত, মাগফিরাত এবং নাজাতের মাস মাহে রমজান।এ মাসেই মহা গ্রণ্থ আল কুরআন নাজিল হযেছিল তাই হাজার মাসের চাইতেও মূল্যবান এ মাস। এ মাসে ১টি নফল নামাজ ১টি ফরজ নামাজ এর সমান, আর ১টি ফরজ ৭০টি ফরজ নামাজ এর সমান। সুবহানআল্লাহ। এক রাকাত নামাজ ৭০ রাকাত নামাজের সমান, কেউ যদি ফজর-এ ২ রাকাত, জোহরে ৪ রাকাত, আসরে ৪ রাকাত, মাগরিবে ৩ রাকাত এবং এশার ৪ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করে তবে সে ১ দিনেই ১১৯০ রাকাত শুধু ফরজ নামাজই আদায় করলো আর বাকি নামাজ গুলো যোগ করলে তার পরিমান হবে আরো অনেক বেশি।

নিজেই অঙ্ক মিলিয়ে নিন সুযোগ হাতছাড়া করবেন নাকি এখনি লুফে নিবেন। আমরা কতটুকু আমল যোগ করতে পেরেছি নিজেদের আমলনামায়। জীবনে আরেকবার রমজান পাবেন তার কোনো গেরান্টি নেই, জীবনের সকল গুনাহ মাপের এটাই সুবর্ণ সুযোগ।

নামাজ ছাড়াও কুরআন তিলাওয়াত এর ক্ষেত্রেও একই সুবর্ণ সুযোগ এক অক্ষরে যেটি ১০ নেকি ছিল অন্য সময়ে, আর রমজান মাসে সেটি ৭০০ নেকি। এ মাসে কাওকে ১ টাকা দান করলে ৭০ টাকাই দান করা হয়ে যাবে, ২ টাকা দান করলে ১৪০ টাকা দান করা হবে, ২ রাকাত নামাজ পড়লে ১৪০ রাকাত নামাজ পড়া হয়ে যাবে। সকল ভালো কাজেই ১ এ ৭০, সারামাস এ সুযোগ আছে সচেতন হবার সময় এখনি।

শুধু তাই নয় সেহরী, ইফতার আর তারাবীহ নামাজের অনাবিল প্রশান্তি আপনার মনকে ১০০% পবিত্র করে দিবে। সুরা তারাবিহ এর চাইতে খতম তারাবিহকে বেশি গুরুত্ব দিন। পাশাপাশি মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকা, যাবতীয় অন্যায় থেকে বিরত থাকা ছাড়াও ভালো কাজে সহযোগিতা আর মন্দ কাজ থেকে দুরে থাকতে পারলেই আপনার প্রতিটি রোজা হবে পরিশুদ্ধ।

রোজা আর দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে আর কোনো অন্তরায় থাকবেনা। এ মাসে বেশি বেশি ভালো কাজ করুন যেন এ মাস থেকে শিক্ষা নিয়ে বাকি জীবন ভালোভাবে কাটাতে পারেন। বিভিন্ন ফোরাম ব্লগ ফেইসবুক এ ভালো কাজের জন্য আহবান করুন, এতে যে সওয়াব পাবেন তাও অন্য সময়ের তুলনায় ৭০ গুন বেশি পাবেন। ইফতার এর আগে দোয়া কবুল হয় তাই এ সুযোগটিও হাতছাড়া করবেননা।

শব ই কদর এর রাতের অভাবনীয় সুযোগতো থাকছেই যে রাতে দোয়া কবুলের ১০০% গেরান্টি থাকে। আলহামদুলিল্লাহ। জান্নাত লাভের সুবর্ণ সুযোগ আপনাকে হাতছানি দিয়ে যাচ্ছে।

এ মাসে সামর্থ্য থাকলে কেউ ওমরাহ করেও আসতে পারেন। রমজান ছাড়াও মদিনা শরিফ এ ১ রাকাত নামাজ ৫০ হাজার রাকাত নামাজের সমান আর মক্কা শরিফ এ ১ রাকাত নামাজ ১ লক্ষ্ রাকাত নামাজের সমান। আর রমজান মাসে সেই সওয়াব এর পরিমান যথাক্রমে ৩৫ লক্ষ এবং ৭০ লক্ষ রাকাত নামাজের সমান। শুধুমাত্র রমজান মাসের জন্যই এ সুযোগ।

আমরা হয়ত অনেকেই এসব কথা জানি, যারা জানি তারা যেন মানার চেষ্টা করি, আর যারা জানিনা তারা যেন আরো জানার চেষ্টা করি।

রমজান মাসে কি করবেন, কিভাবে করবেন?

রহমত, মাহফিরাত ও নাজাতের সুখবর নিয়ে আসে মাহে রমজান । এ রমজানের সে সদ্ববহার করতে পেরেছে সেই সফলকাম, আর যে পারেনি সে পুরোপুরি ব্যর্থ । রমজানের পরিপূর্ণ হক আদায়ে আসুন জেনে নিই কি করা উচিত, আর কি অনুচিত

১। রমজান মাসে কুরআন তিলওয়াত করুন বেশী বেশী, পারলে কয়েকবার খতম করুন । এ মাসে প্রতি হরফের জন্য ৭০ নেকী বরাদ্দ করা হয়ে থাকে যেটি পূর্বে ১০ নেকী ছিলো ।

২। নিয়মিত নামাজ আদায় করুন, এক ওয়াক্তও মিস করবেননা ।

৩। নিয়মিত হাদিস পড়ুন এবং সে অনুযায়ী আমল করুন ।

৪। রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সেহরী খান এবং সময়মত ইফতার করুন ।

৫। কোনসময় ভোর রাতে উঠতে না পারলেও নিয়ত করে রোজা রেখে দিন ।

৬। রোজা রেখে কোনপ্রকার খারাপ কাজে শামিল হবেননা ।

৭। ঝগড়া বিবাদ, মিথ্যা বলা, গীবত করা এসব থেকে দূবে থাকবেন ।

৮। জীবনে যে নামাজ কখনো পড়েননি, তাহাজজুদ, আউয়াবীন, ইশরাক এসব নামাজ পড়ুন ।

৯। সালাতুত তসবীহ পুরো মাসে অন্তত একবার হলেও পড়ুন ।

১০। বেজোড় রাত্রিগুলোতে বেশী বেশী ইবাদত করুন ।

১১। সর্বোপরি আল্লাহর নিকট বেশী বেশী তাওবাহ করুন ।

রমজান মাসে উপরের কাজগুলো করার চেষ্টা করুন ।

রাসূল (সা:) বলেছেন, যে রমজান চলে গেল, কিন্তু গুনাহ মাফ করাতে পারলোনা, তার জন্য ধ্বংস অনিবার্য । আল্লাহ আমাদের রমজানের হক আদায়ের তাওফীক দান করুন।