দেশে বর্তমানে ৩৫ লাখ ৪০ হাজার শ্রমজীবী শিশু রয়েছে এবং ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুরা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজ করছে। ৫টি খাতে ৩৮ হাজার ৮ শিশু কাজ করছে, যার ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশই ছেলে শিশু।”
তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজ করে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।.
আজ বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ব্যুরোর অডিটোরিয়ামে ‘জাতীয় শিশুশ্রম ২০২২’ এর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
বিবিএস জানায়, শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন চুক্তি এবং কাঠামোগত উন্নয়নসংক্রান্ত বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।”
বর্তমান সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নির্মূল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শিশুশ্রম নির্মূলে কৌশল নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্যগুলোকে সামনে রেখে জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ এবং সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ ২০২৩ পরিকল্পনা করা হয়েছে। জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ এবং সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ ২০২৩ এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী জনসংখ্যার শ্রমশক্তি, কর্মসংস্থান এবং বেকারত্বের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা।”
জরিপের ফোকাল পয়েন্ট মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন খাঁন জানান- দেশে পরিচালিত জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ শিশুশ্রম সংশ্লিষ্ট চতুর্থ জরিপ যা শ্রমজীবী শিশু, শিশুশ্রম এবং বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম সংশ্লিষ্ট তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করবে। জেনেভায় ২০১৮ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত আইসিএলএস ( ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অফ লেবার স্টাটিসটিসিয়ানস) সম্মেলনে গৃহীত শিশুশ্রম সম্পর্কিত পদ্ধতি অনুসরণ করে এ জরিপটি পরিচালনা করা হয়। জরিপে ১ হাজার ২৮৪টি প্রাথমিক স্যাম্পলিং ইউনিট (পিএসইউ) থেকে ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা (১২টি নন-রেসপন্স খানাসহ) নির্বাচন করা হয় এবং ৬৪টি জেলা থেকে স্যাম্পল বেসিস তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছিল।”
এই জরিপের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মে পর্যন্ত পরিচালিত হয়। তিনি আরও জানান, প্রতিবেদনে জাতীয় গণনার সঙ্গে শ্রমজীবী শিশু, শিশুশ্রম এবং ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ অনুসারে, ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৩ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন (৩৫ লাখ ৪০ হাজার) শ্রমজীবী শিশু রয়েছে “
যার মধ্যে ১.৭৬ মিলিয়ন শিশু শ্রমের বাইরে এবং ১ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন শিশুশ্রমে রয়েছে। এর মধ্যে ১.০৭ মিলিয়ন ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম রয়েছে। পল্লী এলাকায় ২.৭৩ মিলিয়ন শ্রমজীবী শিশু রয়েছে এবং শহরাঞ্চলে রয়েছে ০.৮১ মিলিয়ন, শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা পল্লী এলাকায় ১.৩৩ মিলিয়ন এবং শহরাঞ্চলে ০.৪৪ মিলিয়ন। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা পল্লী এলাকায় ০.৮২ মিলিয়ন এবং শহরাঞ্চলে ০.২৪ মিলিয়ন রয়েছে।”
এ থেকে স্পষ্ট যে, ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ খাতের উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে শ্রমজীবী শিশুদের সবচেয়ে বড় অংশ নিয়োজিত রয়েছে অটোমোবাইল খাতে। পল্লী ও শহর বিবেচনায় এই খাতে কর্মরত শিশুর ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ পল্লী এবং ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ শহর এলাকায় বসবাস করে।”
এ জরিপের মাধ্যমে একটি শ্রমজীবী শিশু ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টর সমূহে কাজ করার সময় কি কি ধরনের বিপজ্জনক কাজ করতে পারে তা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। আনুমানিক ১৯ দশমিক ১ শতাংশ ছেলে এবং ৭ দশমিক ৭ শতাংশ মেয়ে শিশু ভারী বোঝা বহন, মালামাল টানার কাজে, অধিক ওপর বা ফ্লোর হতে অতি উচ্চতায় উঠে কাজ করে প্রায় ৮ দশমিক ১ শতাংশ ছেলে এবং ০ দশমিক ৩ শতাংশ মেয়ে শিশু। ”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিআইনেন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জরিপের ফোকাল পয়েন্ট মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন খাঁন।//