বাংলা সংবাদ২৪ ডেস্ক– জলপাইগুড়ি শহর থেকে ৪৩ কিলোমিটার দূরের এক জনপদের গ্রামের নাম ধুলাবাড়ি। ওই গ্রামেরই ছেলে করিমুল হক। মধ্যবয়স পেরিয়ে যাওয়া এই মানুষটাই দেখাচ্ছেন, ইচ্ছের কাছে উপায় বারবার হেরে যায়। নিজের মা’কে হাসপাতালে না নিতে পেরে।
নিবেই বা কি করে, দুর্গম ওই পথে যে কোনো অ্যাম্বুল্যান্স নেই, তাই মায়ের মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়েই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, অ্যাম্বুল্যান্সের অভাবে ধুলাবাড়ির আর কারো প্রাণ যাবে না। নিজে খেতে পান না, শেষ সম্বল দিয়ে কেনা বাইকেই তিনি তুলে নিয়েছেন বহু দুঃস্থ রোগীকে।
এই সময় সবার তরে এগিয়ে আসা করিমুল শত মানুষের জীবনে আলো জ্বালালেও, নিজেই পড়ে আছে ঘোর আঁধারে। চোখের জটিল সমস্যায় ভুগছেন তিনি। সে খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর বহু মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। সেই অর্থে হায়দরাবাদে তার চিকিৎসাও হয় কিন্তু চোখের সমস্যা এখনও মেটেনি।
অখ্যাত ধুুলাবাড়িরই করিমুল যেন অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলছেন। ধীরে ধীরে তিনিই হয়ে উঠছেন ধুলাবাড়ির অসহায়-অসুস্থদের জন্য এক মহামানব, আবার নতুন করে স্বপ্ন সাজায়। সেই বাইক অ্যাম্বুল্যান্স এখনও আছে, সঙ্গে আরেকটি অ্যাম্বুল্যান্সও যোগ হয়েছে কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট নয় করিমুল। পদ্মশ্রী পাওয়া সেই মানুষটাই এখন তৈরি করছেন গোটা একটা হাসপাতাল, একার দায়িত্বে, অসীম এক সাহসে ভর করে।
তাই চোখের সমস্যাকে আপাতত চিন্তার বাইরে রেখে এবার নিজের ঘর লাগোয়া জমিতেই গড়ে তুলছেন গরিবের হাসপাতাল। নাম দিয়েছেন (মানব সেবা সদন)। এরইমধ্যে দোতলা কাঠামো গড়ে উঠেছে সেই হাসপাতাল বাড়ির।
করিমুল বলেন, একটা হাসপাতাল গড়ে তুলতে যতটা প্রয়োজন অর্থের, তা এখনও জোগাড় করে উঠতে পারিনি। তাই এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষই ভরসা। হানাহানি, বিদ্বেষ, হিংসা, আর বিভেদের এই দুনিয়ায় করিমুল আসলে ধুলাবাড়ির অন্ধকার থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসা উল্কা। সবাই চেয়ে থাকে তার দিকে, মৃত্যুকে বিদায় জানাতে হাত ধরে এক জীবনদূতের।