logo
দেশের উন্নয়ন হলেও হাতছাড়া হয়ে গেছে সমাজটা
সংবাদ প্রকাশিত:

নিজস্ব সংবাদদাতা–

চারদিকে উড়তে থাকে বাঙালির বিজয় নিশান। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা মরণপণ লড়াই করে বিজয়ের বেশে ঢাকার দিকে এগোতে থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করতে থাকে। এ মাসের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন পূরণ হয়। আসে মহান বিজয়। শুরু হয় স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশের নবযাত্রা “

;সেই মহান স্বাধীনতার ৫১ বছরে অনেক উত্থান-পতন থাকলেও এই সময়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। একটি জাতীয় দৈনিকের  সঙ্গে একান্ত আলাপকালে রাশেদ খান মেনন একান্ত আলাপকালে মেনন বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছরে আমরা বহুদূর এগিয়েছি। আমাদের দেশকে বলা হতো তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ। ”

;সেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের উদাহরণ হয়েছে। কিন্তু অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এই পর্যন্ত আসতে হয়েছে। স্বাধীনতার আগে আমাদের যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটগুলো ছিল, তা উত্তরণ করা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। রাশেদ খান মেনন আরও বলেন- আমাদের একটি বড় অর্জন হলো আমরা সংবিধান প্রণয়ন করতে পেরেছিলাম।”

;পাকিস্তান যেটা ৯ বছরে করতে পারেনি, সেটা আমরা ৯ মাসে করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো যারা এটা তৈরি করেছিল, তারাই কাটাছেঁড়া শুরু করে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরে কার্যত সংবিধানের যেটা মূল ভিত্তি সেটাই বাদ দেওয়া হয়। এর ফলে দেশে সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়েছে। ধর্মবাদী রাজনীতির উত্থান ঘটেছে।”

;পঁচাত্তরের পরে আমরা দেখেছি, দেশে একটা নব্য ধনিক গোষ্ঠী সৃষ্টি হয়েছে এবং একটা বড় ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৪৩ সালের ১৮ মে বাংলাদেশের এক সম্ভ্রান্ত রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম রাশেদ খান মেননের। তিনি ষাটের দশকে সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানসহ অনেক আন্দোলনে সামনের সারির নেতা ছিলেন।”

;১৯৬৩-৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর ভিপি ও ’৬৪-৬৭ সালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হন তিনি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে কার্যকর করতে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ার কাজ শুরু করেন মেনন। তিনি বেশ কয়েকবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। সরকারের মন্ত্রী হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।”

;রাজনীতি ছাড়াও গবেষণা, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও কলাম লেখেন রাশেদ খান মেনন। রাশেদ খান মেনন বলেন, ক্ষমতা এখন আর রাজনীতির হাতে নাই। খুব ক্ষুদ্র ধনিক গোষ্ঠী এবং সামরিক বে-সামরিক আমলাদের হাতে। তিনি বলেন, আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছি, উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। কিন্তু আমাদের সামাজিক অগ্রগতি কেবল পিছিয়েই যায়নি, সমাজটা একেবারেই নিচের দিকে চলে গেছে, হাতছাড়া হয়ে গেছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের সৌহার্দ-সম্প্রীতি, পারস্পরিক মর্যাদাবোধ এগুলো আর নেই। নতুন প্রজন্ম মাদক আর ফেসবুকে আসক্ত।”

;এ ছাড়া এই সময়ে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়ে গেছে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তৃতি। সামাজিক মাধ্যম দেখলে মনে হবে বাংলাদেশ আফগানিস্তান বা পাকিস্তান হয়ে গেছে। নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে কিন্তু নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়নি। রাশেদ খান মেনন বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ। বঙ্গবন্ধু ফিরে এসে তো তার বক্তৃতায় এমনকি সংবিধানেও বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তাকে হত্যার পরে সংবিধানের মূল ভিত্তিটাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।”

;এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন- আমরা শুধু ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় আছি তা-ই নয়। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সদস্য আমাদের রয়েছে, যা দিয়ে সংবিধানের পরিবর্তন করা সম্ভব। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কমিটি সদস্য থাকাকালীন নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জিয়া-এরশাদ মৌলিক ভিত্তি ধসিয়ে দিয়েছে। সেটা কাটিয়ে উঠতে গেলে, শেখ হাসিনাই পারতেন। আমি মনে করি এখনো পারেন।”

;বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, নয়া উদারনীতিবাদী অর্থনীতি আমরা গ্রহণ করলাম। বিশেষ করে সমাজতন্ত্র পতনের পরে যেটা এলো। এই জায়গায় আমরা আত্মসমর্পণ করেছি। এই যে আমরা আইএমএফের শর্ত মেনে ঋণ নিতে যাচ্ছি। আমি বহুবার বলেছি-আমাদের আইএমএফের শর্ত কেন মানতে হবে? কিন্তু আমরা এটা মানছি। এর ফল ভালো হবে না।.