logo
কুমিল্লায় ৪ যুবক মিলে কিশোরী ধর্ষণ, সালিশে ৮ হাজার টাকা রফা!
সংবাদ প্রকাশিত:

আব্দুল্লাহ আল মানছুর(কুমিল্লা):-কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের বান্দের জলা গ্রামের ছদ্দনাম সালমা (১৫) কে ৪ যুবক কর্তৃক গণধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

গত ১২.১১.২০১৯ইং দুপুরের দিকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বান্দের জলা গ্রামের অলি আহম্মদের পুত্র আশিক(৩২) একই গ্রামের বেলাল হোসেনের পুত্র সিএনজি ড্রাইভার বন্ধু জাহিদ হোসেন (২৫) এর সহযোগিতায় সিএনজি যোগে কিশোরী ছদ্দনাম সালমা (১৫) কে নিয়ে প্রথমে আশিক চৌদ্দগ্রাম যায়। চৌদ্দগ্রাম হতে ধর্ষণের শিকার ছদ্দনাম সালমা (১৫) কে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যায় আশিক।

সালমা (১৫) ও আশিক দুই দিন ঢাকায় অবস্থান করার পর আশিক সালমাকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে গত ১৪.১১.২০১৯ইং পূণরায় চৌদ্দগ্রামে নিয়ে আসে। চৌদ্দগ্রামে এসে আশিক তাহার বন্ধু বান্দের জলা গ্রামের ইমাম হোসেনের পুত্র ফয়সাল ও শফিউল্লাহ্র পুত্র রাকিব কে নিয়ে সালমাসহ অজ্ঞাত স্থানে অবস্থান করে।

একদিন চৌদ্দগ্রামে থাকার পর সালমা কে আশিক, ফয়সাল ও রাকিব বলে যে তুমি এখন বাড়ি চলে যাও পরবর্তীতে তোমার সাথে মোবাইলে কথা হবে। এ কথা বলে ৩ যুবক মেয়েটিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে সালমা (১৫) বাড়ি এসে নিকটস্থ লোকজনকে বিষয়টি খুলে বলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে- চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বান্দেরজলা গ্রামের ভিকটিম (ছদ্দনাম) সালমা (১৫) এর মায়ের সাথে সে বসবাস করে থাকে।

বাবা (ছদ্দনাম) মোখলেছুর রহমান চাকরির সুবাধে চট্টগ্রাম থাকেন। মা ও মেয়ে গ্রামে থাকার কারনে বিভিন্ন সময় অভিযুক্ত যুবকেরা বান্দের জলা গ্রামের বখাটে আশিক (৩২), ফয়সাল (২৬) ও রাকিব (২৫) সালমার সাথে কথা বলার জন্য বাড়ির আশে পাশে ঘুড়াঘুড়ি করতো। এক পর্যায়ে আশিকের সাথে কিশোরী ভিকটিম (ছদ্দনাম) সালমা (১৫) এর প্রেম সর্ম্পক তৈরি হয়।

গণধর্ষনের অভিযোগের বিষয়ে ভিকটিমের প্রতিবেশীর সাথে কথা বললে তাহারা জানান- সালমা (১৫) কে গত ১২.১১.২০১৯ইং হতে ১৫.১১.২০১৯ইং পর্যন্ত চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বান্দের জলা গ্রামের আশিক(৩২), ফয়সাল (২৬) ও রাকিব (২৫) তাহারা তিনজন ধর্ষণ করেছে বলে ভিকটিম ছদ্দনামন সালমার পরিবার আমাদের জানান।

পরবর্তীতে গণধর্ষণের বিষয়ে সালমার বাবা ছদ্দনাম মোখলেছুর রহমানকে জানাইলে তিনি ভিকটিম সালমা (১৫) কে নিয়ে আলকরা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক হেলালের সরনাপন্ন হয়। তবে চেয়ারম্যান বিষয়টি সমাধান করতে অনীহা প্রকাশ পূর্বক থানায় মামলা দায়ের করতে নির্দেশনা ও পরার্মশ দিয়ে থাকে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে আলকরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক হেলালের সাথে কথা বললে তিনি বলেন- আমার নিকট ধর্ষণের শিকার ভিকটিম ছদ্দনাম সালমা(১৫) ও তাহার পরিবারের লোকজন সিএনজি চালকসহ ৪ যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আসছিলো। আমি এ ধরনের বিচারকার্য করিনা এবং ভিকটিমের বাবাকে থানায় অভিযোগ করতে পরামর্শ দিয়ে থাকি।

গণধর্ষণের শিকার সালমার বাবা ছদ্দনাম মোখলেছুর রহমানকে এলাকার বিভিন্ন লোকজন মামলা না করার জন্য হুমকি ধমকি দিলে ভয়ে তিনি মেয়ের সম্মানার্থে থানায় আর মামলা করতে যাননি। পরবর্তীতে বিষয়টি আলকরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাচ্চুকে অবহিত করলে তিনি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের করার আশ্বাস দেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ধর্ষণের বিষয় নিয়ে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের পরিবার সদস্যদের নিয়ে গত ২৩.১১.২০১৯ইং কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বান্দের জলা গ্রামে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার মতিন, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি খোরশেদ আলম, আলকরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাচ্চুর নেতৃত্বে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশে বসা হয়। সালিশে ৩ যুবক ও সিএনজি চালকের সহযোগিতায় কিশোরী ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা জানায়- গ্রাম্য বিচারক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাচ্চু।

পরবর্তীতে ধর্ষন করার দায়ে অভিযুক্ত ৩ যুবকসহ ১ সিএনজি চালককে সর্বমোট ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নগদ হিসেবে ৩ জন ধর্ষক, সিএনজি চালক এর কাছ থেকে নগদ ৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ধর্ষণের জরিমানার নগদ ৮ হাজার টাকা বর্তমানে গ্রাম্য সালিশকারী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাচ্চুর কাছে রয়েছে।

ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা এবং চার যুবককে রক্ষার বিষয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাচ্চু’র মোবাইলে কল করে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমরা সমাজের ইজ্জত রক্ষার্থে বিষয়টি সামাজিক ভাবে সমাধান করার চেষ্টা করে থাকি। আমরা একটা সমাধানে এসেছি। এ নিয়ে সাংবাদিকরা বাড়াবাড়ি করবেন না প্লিজ।

অভিযুক্ত চার যুবককে অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। নগদ ৮ হাজার টাকা জমা রয়েছে। এবং বাকী ১০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ধর্ষকরা জরিমানা হিসেবে ভিকটিমের পরিবারকে তা হস্তান্তর করবে। জানা যায় যে- ধর্ষণের দ্বায় শিকার পূর্বক ৪ অভিযুক্তদের কাছ থেকে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাচ্চুসহ সালিশকারীরা। গ্রাম্য বিচারক আলকরা ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাচ্চু প্রথমে ধর্ষণের কথাটি শিকার করলেও পরবর্তীতে তিনি ধর্ষণের কথাটি এড়িয়ে চলেন।

এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সেলিনা আক্তারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন- ‘আমি ধর্ষণের বিষয়টি জানতাম না। তবে এখন শুনলাম,পরবর্তীতে আআইনগত ব্যবস্থাসহ ধর্ষণের শিকার হওয়া ছদ্দনাম সালমা(১৫) কে আইনী সহযোগিতা করা হবে।